এমনই এক গন্তব্যস্থল রয়েছে হুগলিতে। হাওড়া থেকে
ঘণ্টা দেড়েকের পথ। কলকাতা থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে। পেল্লাই এক
জমিদারবাড়ি। হলফ করে বলতে পারি গোটা বাড়ি ঘুরে দেখতে পা
ব্যাথা হয়ে যাবে। তবে সে বাড়ি কিন্তু
মোটেই ভাঙাচোরা নয়। হ্যাঁ খানিক অংশ বন্ধ
বটে, কিন্তু বাকি অংশও
কম কৌতূহল উদ্দীপক নয়!
লুটেরা-সহ বহু ছবির শুটিং হয়েছে এই ইটাচুনা রাজবাড়িতে। সিনেমার
পরিচালক-প্রযোজকদের কাছে এই বাড়ির খুব ডিমান্ড। বিশাল বাড়িতে
থাকবার জন্য রয়েছে বড়মার ঘর, বড়পিসি, মেজপিসি, ছোটপিসিদের ঘর। আর সেই সব ঘরে
পুরনো আমলের নকশাকাটা পালঙ্ক।তাতে দুধসাদা চাদরের ওপর
আরাম করে বসে নিজেকে খানিকক্ষণ জমিদারবাড়ির সদস্যও ভেবে নিতে পারেন। সেই ভাবনাকে আরও
যুতসই করে তুলবে রাজকীয় খানা। আহা! পিতলের থালা
বাটিতে বহুপদ সাজিয়ে যখন খাবার পরিবেশন করা হয়, তখন তা দেখেই মন জুড়িয়ে যায়। তার সঙ্গে সঙ্গতে থাকে
রবীন্দ্র সঙ্গীত।
তা এ হেন জমিদারবাড়ির ইতিহাসখানা একটু বলে রাখি। ১৭৬৬ সালে এ বাড়ি
তৈরি করেন সাফল্য নারায়ণ কুণ্ডু। তাঁর আসল পদবী ছিল কুন্দন।
তিনি ও তাঁর
পূর্বপুরুষ ছিলেন মারাঠি লুঠেরা। দুর্ধর্ষ বর্গী। একসময় বর্গীরা
বাংলায় আক্রমণ শুরু করে। মারামারি-কাটাকাটি থামলে
বর্গীদের মধ্যে অনেকে বাংলায় রয়ে যায়। এঁদের একজন ছিলেন সাফল্য নারায়ণ। তাঁর প্রচুর
সম্পত্তি ছিল। তাই দিয়ে তিনি পাণ্ডুয়া লাগোয়া ইটাচুনা, খন্নানে প্রচুর
জমিজমা কেনেন। পাকাপাকি বসবাস শুরু
করেন।
এই পরিবারের বর্তমান বংশধররাই রাজবাড়িটিকে পর্যটকদের জন্য
খুলে দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন। গ্রাম্য পরিবেশে এই রাজবাড়িতে
প্রাচীনত্বের সঙ্গে আধুনিকতার মেববন্ধন লক্ষনীয়। বাড়ির কাঠামো
প্রাচীন হলেও, যে ঘরগুলি
পর্যটকদের থাকার জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে তাতে সমস্ত আধুনিক ব্যবস্থা রয়েছে। এসি, গিজার, কমোড, বাথটাব, ঝাঁ চকচকে
স্নানাগার সবই রয়েছে ঘর লাগোয়া।
আর রয়েছে এর প্রাচীন ঠাকুরদালান, সেখানে রাধাকৃষ্ণের
নিত্য পুজোর আয়োজন, সন্ধ্যারতি হয়।
ভাবা যায় একসময়ের বর্গীরা পরবর্তীতে বৈষ্ণব হয়ে রাধাকৃষ্ণের
বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করেন বাড়িতে।
বিশাল বাড়ির আনাচে-কানাচে ঘুরে দেখলে মেন হবে যেন
গোলকধাঁধাঁ। সারি সারি ঘর, বিভিন্ন জায়াগায় সিঁড়ি, নাচঘর, অন্দর মহল, বাহির মহল নিয়ে
সে এক জমজমাটি ব্যাপার।আর সন্ধে হলেই চারপাশ
নিঃস্তব্ধ। রাতের বেলা বিশাল বাড়ি ঘুরলে গা ছমছম করতে
বাধ্য। বলা যায় না, ইচ্ছে হলে ‘তেনারা’ দেখাও দিতে
পারেন।
তবে ভয় পাওয়ার কারণ নেই। বর্গীদের বাড়ি
হলেও, খুব একটা বদনাম এ
বাড়ির নেই। বরং বিশাল ছাদের এই বাড়িতে একরাত কাটিয়েই
আসুন। ভাল লাগবেই।আর হ্যাঁ
ছাদটা ঘুরে দেখতে ভুলবেন না।
কী ভাবে যাবেন
সড়কপথ ও রেলপথ দুভাবেই যাওয়া যায়
রেলপথে হাওড়া স্টেশন থেকে মেমারি বা পাণ্ডুয়া লোকাল
ধরে আসুন খন্নান স্টেশন। সেখান থেকে রিকশা, অটো, টোটোতে রাজবাড়ি। সময় লাগবে মিনিট দশেক।
সড়কপথে কলকাতা থেকে বেলঘরিয়া এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে
দক্ষিণেশ্বর অথবা হাওড়া দিয়ে সড়ক পথে আসা যায়।
থাকা ও খাওয়া
ঘর বুক না করলে রাজবাড়িতে ঢোকা যায় না। ঘর বুক করে
আসাই ভালো। কারণ সবসময় ঘর পাওয়া যায় না।বেশিরভাগ ঘরে দু’জন করে থাকার ব্যবস্থা।
কিছু ঘরে তিনজন ও ছ’জন থাকার ব্যাবস্থা আছে। ঘরভাড়া ১৭০০ -৪০০০ পর্যন্ত।
খাওয়া মিল সিস্টেম. ভেজ-ননভেজ সবরকমই পাওয়া যায়। খাবারের
মান খুব ভালো।একবেলা খাওয়া খরচ মাথাপিছু ১৮০-২৫০।
ঘর বুকিং ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ফোন করুন
91 96744 30332, 9830142389
লগইন করতে পারেন
http://www.itachunarajbari.com
Besh bhalo ...
ReplyDelete